হাতিয়ার ১০০ ব্যক্তিত্বের ১৫তম ব্যক্তির জীবনী
খান সাহেব ছৈয়দ আহম্মদ
জন্ম-১৮৯৬ জন্ম-১৯৬৩
লেখক- ফজলে এলাহী শাহীন
প্রকাশক- হাতিয়া ৮৭ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন
হাতিয়া দ্বীপের কালজয়ী কীর্তিমান মহাপুরুষের নাম ছৈয়দ আহম্মদ । তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে প্রখর মেধা ও কর্মে বিরল কৃতিত্বের সম্মাননা স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে খান উপাধিতে ভূষিত করেন । সেই থেকে ছৈয়দ আহম্মদ খান সাহেব ছৈয়দ আহম্মদ নামে পরিচিত । হাতিয়ায় নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই বিরল সম্মানে সম্মানিত করা হয় । বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এরূপ সমাজসেবীদের ব্রিটিশ সরকার এভাবে সম্মানিত করেন।
তৎকালীন ভুলুয়া পরগণার অন্তর্গত নলচিরা মৌজার । কাইছাখালী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ছৈয়দ আহম্মদ জন্মগ্রহণ করেন । জন্ম ১৮৯৬ পিতার নাম জাফর আলী হাওলাদার । কিশাের বয়সে আদি বাড়ী নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়লে পিতা জাফর আলী হাওলাদার চরঈশ্বর ইউনিয়নের বর্তমান স্থানে বসতি স্থাপন করেন ।
গ্রামের পাঠশালায় তার পড়াশুনা শুরু । অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছৈয়দ আহম্মদ যথাসময়ে কৃতিত্বের সহিত প্রাইমারী পাশ করেন । তৎকালীন সময়ে দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াক্তনা করা সম্ভব হয় নি । দ্বীপের সাথে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের যােগাযােগ ছিল অত্যন্ত নাজুক ।
কিশাের বয়সে ছৈয়দ আহম্মদ তার প্রতিবেশী সমবয়সী ছেলেদের সাথে খেলাধূলা করে সময় কাটাতেন । অনুন্নত অঞ্চল শিক্ষার যেমন সুযােগ নেই , তেমনি যাতায়াতে ছিল না রাস্তা কিংবা সাঁকোর ব্যবস্থা । এলাকার জনসাধারণের সমস্যাগুলাে তাকে ভাবিয়া তােলে । সর্বদাই চিন্তা করতেন কিভাবে এ সকল সমস্যার সমাধান করা যায় । প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি খেলার সাথীদের নিয়ে দল গঠন করেন এবং সকলকে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে আত্মনিয়ােগ করেন । গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট মেরামত এবং ছােট ছােট খালে সাঁকো নির্মাণ করেন । গ্রামে ছােট ছােট ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য সান্ধ্যকালীন শিক্ষার জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন । এতে গ্রামের জনগণও উৎসাহিত হন । বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান । ছৈয়দ আহম্মদের এই সকল কর্মকান্ডে গ্রামবাসীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং সকলেই সহযােগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে থাকেন । ধীরে ধীরে তার মাঝে নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিত্ব করার পরিকল্পনা আসে ।
খান সাহেব ছৈয়দ আহম্মদ অবিভক্ত চরকিং - চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন । তার প্রেসিডেন্ট কালীন দ্বীপের বিখ্যাত লেখক মােঃ বেলায়েত হােসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন । পরবর্তীকালে চরকিং ও চরঈশ্বর রায় ইউনিয়ন পরিষদ আলাদা আলাদা ইউনিয়ন পরিষদ হয় । তার শাসনামলে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ তিনিই মনােনীত করতেন । তিনি একজন কিং মেকার ছিলেন ।
খান সাহেব ইউনিয়ন বাের্ডের বিধি অনুসরণ করে শালিসী বোর্ড চালু করে তৎকালীন সময় চৌদ্দশত মামলার নিষ্পত্তি করেন । তার এই অভাবনীয় কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে “ খান সাহেব " উপাধিতে ভূষিত করেন । তিনি ইউনিয়ন বাের্ডের আইনানুসারে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা করে এলাকায় ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করতেন।
খান সাহেব মাল্টিপারপাস সােসাইটি গঠন করে তার ইউনিয়নের দরিদ্র কৃষকদের মাঝে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে কৃষকদের দরিদ্রতা লাগৰে বিশেষ অবদান রাখেন । সরকারী কর্মকর্তা - কর্মচারী অপেক্ষা এলাকার জনগণ তাকে বেশী শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখত ।
খান সাহেব ছৈয়দ আহম্মদ সুদীর্ঘ ৩২ বছর যাবত অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান হিসাবে হাতিয়ার ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে মৃত্যুর পূর্ব অবধি তিনি তার এলাকার সকল সম্প্রদায়ের লােকদের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন ।
দ্বীপের এই মহান কৃত্বিমান পুরুষ হজ্ব পালন করেন ।
নানা প্রতিকূলতায় যদিও তিনি উচ্চ শিক্ষা নিতে পারেননি , কিন্তু শিক্ষার প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল । তার স্ত্রীর নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । তারই অনুপ্রেরণার ফলস্বরূপ তার কৃতি সন্তান চেয়ারম্যান খােকা মিয়া পিতার নামে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন । খান সাহেব এলাকায় মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধার্মিক , সাংস্কৃতিমনা ও সৌখিন ছিলেন । সরকারী কর্মকর্তাগণ দক্ষিনাঞ্চলে এলে তার বাড়ীতে আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন । তৎকালীন সময়ে তিনি গ্রামােফোন ব্যবহার করতেন । খান সাহেবের ঐ গ্রামােফোনে দেশ - বিদেশের নামী - দামী শিল্পীদের গান রেকর্ড দেখে দ্বীপের এবং সরকারী কর্মকর্তারা বিস্মিত হন । দ্বীপাঞ্চলে এরূপ সংগ্রহ অনেকের ধারণার বাহিরে ছিল ।
দ্বীপের এই মনীষি ১৯৬৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে হাতিয়ায় ইন্তেকাল করেন ।
কিছু ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন।
সবাই শেয়ার করি তা হলে এই গুর্ণী ব্যক্তিদের জীবনী হাতিয়ার নতুন প্রজম্ম জানতে পারবে।
0 Comments