বিষয়ঃ হাতিয়া'র ৫০ বছরের উন্নয়নের গল্প
লেখক..... Md Repaj Uddin
উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন দালান, ভবন, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদির উন্নয়ন কিন্তু প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন বলতে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বুঝায় না।উন্নয়ন বলতে বুঝায় মানুষের জীবনমানের সামগ্রিক সত্ত্বার উন্নয়ন। মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবেশ সংরক্ষণ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নারী উন্নয়ন।আমি জানিনা হাতিয়াতে এসবের কোনটির উন্নয়ন হয়েছে!! হাতিয়ার উন্নয়ন বলতে মোটাদাগে চারটি বিষয় সামনে আসে।
১. কিছু স্কুল ভবনের উন্নয়ন
২. এক লেইন বিশিষ্টি সড়ক যেটি হাতিয়ার প্রধান সড়ক
৩. তমরুদ্দিন ও বাংলাবাজারে ব্লক বাঁধ
৪. হাতিয়ার চারদিকে বেড়িবাঁধ
হাতিয়াতে কিছু স্কুল ভবনের উন্নয়নকে একগ্রুপ উন্নয়ন বলে প্রচার করলেও তারা জানেনা এসব স্কুল ভবন বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর অনুদানে নির্মিত হয়েছে, দুর্যোগ প্রশমন ও ক্লাইমেট মিটিগেশনের জন্য!আর নেতারা সেটার নির্মাণ বাবদ ১০% নিজেদের পকেটে ডুকিয়েছেন! আর কিছু ভবন হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন তথা এমডিজি ও এসডিজির গোল অর্জনের জন্য। তা ক্লাইমেট রেসিলেন্ট প্রকল্পের অধীন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভবন গুলো নির্মাণ করেছে!!এটির কৃতিত্ব কোন নেতার নয়, কৃতিত্ব পরিবেশের, দুর্যোগের!! আমাদের জাতীয় সড়ক তাও একলেইন!!প্রায় সময় সেটির বাগলা উঠে থাকে!! আংশিক ভাঙ্গন রোধের প্রচেষ্টার জন্য তমরুদ্দিন ও বাংলা বাজারে ব্লক বাঁধ এবং হাতিয়ার চারপাশে বেড়িবাঁধ এটি এখন হট টপিকস!! তাহলে ৫০ বছর পরে আমাদের উন্নয়ন বলতে আমরা কী বুঝব?? কী বলব??
হাতিয়ার রাজনৈতিক উন্নয়ন বলতে পীরতন্ত্রের উন্নয়ন বুঝায়!! সেটা বেশ ভাল উন্নয়ন হয়েছে!! যারা ক্ষমতায় থাকের তাদের পূঁজা করার লোকের অভাব হয়না!! ফলাফল, পীরদের প্রচুর ধন সম্পদ, দালান-কোঠা ও দাগের জমির মালিক হয়েছেন। স্বাধীনতার পরবর্তী কোন পীরগোষ্ঠীর উন্নয়ন হয়নি তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা, সকলের দালান আছে, আছে বিশাল জমির দাগও!! এই পীরতন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে হাতিয়ার রাজনৈতিক কালচার ধ্বংস হয়ে গেছে পুরোপুরি। এতে রাজনৈতিক কোন নেতা উঠেনি, উঠতে দেয়নি! কোন পাইপ লাইন নেই! তাই পীররেরা যাই বলে তাই সত্য, যা করে তাই অসাম!! এদের রাজনৈতিক মান ওয়ার্ড নেতাদের গুনগত মানকেও অতিক্রম করবেনা!এরা সামান্য পদ কিংবা কিছু ব্যবসার জন্য নিজেদের বিবেক বিক্রি করে পীরদের পূঁজা করে নিজেরাও নূন্যতম নাগরিক সুবিধা না পেয়েও! তাই দু-একজন ছাড়া হাতিয়ার অধিকাংশ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেতাদের না আছে হাতিয়ার খরব, না আছে সরকারের খবর, বৈশ্বিক খবরতো দূরের হিসেব!এরা সরকারের উন্নয়ন চেতনা ধারনে সক্ষম নয় তাহলে সেটা কীভাবে কন্ডাক্ট করবে? আঞ্চলিক নেতৃত্ব ও জাতীয় নেতৃত্বতো দূরের হিসেব!! এই রাজনৈতিক ভীষণ শূন্যতা হাতিয়ার রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নে পরিনত করেছে!! হাতিয়ার রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দুষ্টু চক্র চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে!!
হাতিয়ার কিছু নেতা বিশাল ধন সম্পদের মালিক, এই দাম্ভিকতায় তারা নিজেদের হাতিয়ার যোগ্য নেতা হিসেবে মনে করে এবং মৌসুমী রাজনীতি করে!! ফলাফল, হাতিয়ার মানুষের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়!বিশাল শূন্যতায় গ্রাস করে সব কিছু! কারন রাজনীতিতে মৌসুমি বলতে কিছু নেই কিংবা প্রচুর ধন প্রদর্শনেরও কিছু নেই!!
আবার কেউ মনে করে হাতিয়া তার ধ্যান-জ্ঞান, তিনি হাতিয়ার মানুষ ছাড়া কিছু বুঝেন না!! বিশ্বাস করুন এটা ভন্ডামী ও প্রতারনা ছাড়া কিছু নয়!! তাদের কর্মকাণ্ড তার ছিঁটেফোঁটা লক্ষণও পাবেন না। বরং তাই আবেগী বাক্য নিক্ষেপ করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছেন এবং নিজের আখের গোছানো কাজটা সেরেছেন বেশ ভালোভাবে কোন রকমের জবাবদিহিতা ছাড়া!! এই আবোগে মানুষ তাদের নানা উপাধিতে ভূষিত করেছেন কারন স্বল্প শিক্ষিত সাধারণ মানুষের আবেগ বেশি এবং কোন কিছু বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তাদের নাই!! তাই এক কাপ চা, একপ্লেট বিরানী কিংবা নাম ধরে ডাকা ও কল করার কারনে তাদের এসব উপাধীতে ভূষিত করেছেন!! আর জনগনের জন্য চিন্তা করে ঘুমাতে না পারা নেতারাও চাই ওই মার্কা জনগন!! তাই হাতিয়ার মানুষ শিক্ষিত হোক, হাতিয়ার মানুষের উন্নয়ন হোক কিংবা হাতিয়ার উন্নয়ন হোক তা ওই জনগনের প্রান নেতারা চান না। কারন তারা জানে জনগনের উন্নয়ন মানে জনসচেতনতা বাড়বে তখন তারা এমন উপাধীতো পাবেন না বরং জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে!! এই মানসিকতা যারা রাখে তাদের আর যাই হোক নেতা বলতে পারেন না পেত্নী বলা ছাড়া।
হাতিয়ার নেতারা জাতীয় দিবসে জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তেলন ছাড়া আর কিছু বলে আমার জানা নাই।তাও কে পতাকা ধরবে, কে আগে ধরবে এসব নিয়ে বিশাল রাজনীতি! না আছে দলীয় ফোরামে আলোচনা না আছে জনগনের সাথে মতবিনিময়। না করে দলীয় ফোরামে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা, সরকারের পরিকল্পনা পাঠ ও সে অনুসারে প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন কিংবা সুশীল অথবা জনগনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা! না করে মিছিল, মিটিং, সভা সমাবেশ, সেমিনার৷ ও কনফারেন্স! বরং নানা গায়েবী কমিটি দিয়ে সরকারি বাজেট গায়েব করে পেলে!! এমনি দূর্গম দ্বীপ হওয়াতে এখানে চৌকশ অফিসারেরা আসতে চাইনা, আসলেও এমন অসভ্য গায়েবী কমিটির অত্যাচারে চলে যেতে হয় নিরবে!! সমাবেশ সাধারণত করা জনমত গঠনের জন্য কিংবা মত বিনিময়ের জন্য আমরা দেখেছি নেতারা সামাবেশ করে নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য!! তাও বিরানী পরিবেশন করা হয়ে ট্রাকে ট্রাকে জনগনকে নিয়ে!জনগন বিরানীর লোভে ট্রাকে করে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে!
সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই, তারা কোন ঘটনা ঘটার পরে নিউজ করে তাও কোন গোষ্টির দিকে চাপিয়ে হলুদ সংবাদ পরিবেশন করে!! তারাও সুশীলের মত জিম্মি!! তাই সংবাদপত্র ও সুশীলের ভূমিকা নগন্য। তবে সাম্প্রতিক কালে ওটা চাই, সেটা চাই বলে নানা কর্মসূচি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সুশীল সমাজে তবে তার কোন জ্ঞান ভিত্তিক কোন ভিত্তি উপস্থাপন করা হয়না!!
আর হাতিয়ার শিক্ষা, চিকিৎসা, সাংস্কৃতি, যোগাযোগ, কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু, মানবাধিকার, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, নারী উন্নয়নের কথা কেউ জানতে চাইবেন না প্লিজ।
হাতিয়ার উন্নয়নের আগে এসবে উন্নয়নের জরুরি তা না হলে হাতিয়া আরো রাজনৈতিক অন্ধকার গহবরে পতিত হবে।।আর এটাই হল হাতিয়ার ৫০ বছরের উন্নয়নের গল্প।।
0 Comments